বিকেএসপি কলেজ
পটভূমি :
বিকেএসপি খেলাধুলা ও পড়ালেখার সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়ার একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীকে আধুনিক ও চৌকস করে গড়ে তুলতে বিকেএসপি বদ্ধপরিকর| এজন্য এখানে সুশৃঙ্খল ও উন্নত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। দেশের আবহমান ঐতিহ্যে লালিত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠা একজন সুশিক্ষিত খেলোয়াড়-ই পারে ক্রীড়াঙ্গনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে। সৎ, যোগ্য ও নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা অর্জনের জন্য তাই সাধারণ শিক্ষাকে বিকেএসপি সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার এবং জাতীয় উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই-বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে বিকেএসপি জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীকে বিজ্ঞান ভিত্তিক নিবিড় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা প্রদান করে আসছে। বিকেএসপিতে বর্তমানে চতুর্থ থেকে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত এখানে শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে বিকেএসপিকে একটি আন্তর্জাতিকমানের ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হবে বলে সরকার দৃঢ় আশাবাদী।
প্রশাসন :
১৯৮৬ সালে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হলেও ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে লে. কর্নেল পদমর্যাদার একজন অফিসার শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এ ছাড়াও রয়েছেন একজন উপাধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক যাদের সক্রিয় সহযোগিতায় অধ্যক্ষ কলেজ প্রশাসন পরিচালনা করেন।
শিক্ষকমণ্ডলী :
বিকেএসপি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক প্রতিষ্ঠান। শিক্ষকগণ বিকেএসপির আবাসিক ক্যাম্পাসে থাকেন। প্রতিটি বিষয়ের শিক্ষকগণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স সহ মাস্টার্স ডিগ্রী প্রাপ্ত এছাড়াও শিক্ষাও প্রশাসন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
পাঠ্যসূচি/সিলেবাস :
বিকেএসপিতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি অনুসরণ করা হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নির্ধারিত বিষয়ে বই পড়ানো হয়। একমাত্র বিকেএসপিতেই ক্রীড়া বিষয়ে এসএসসি পর্যায়ে ১০০, এইচ এস সিতে ২০০ এবং স্নাতক পর্যায়ে ৬০০ নম্বরের পাঠ্যসূচি আছে।
শ্রেণি কার্যক্রম :
বিকেএসপির প্রশিক্ষণার্থীদেরকে প্রতিদিন সকাল ৯.২৫ ঘটিকা থেকে ১.০০ ঘটিকা পর্যন্ত শ্রেণি কক্ষে নিয়মিত পাঠদান করা হয় এবং বিকেলে অনুশীলন শেষে সন্ধ্যায় শিক্ষকগণের নিবিড় তত্ত্বাবধানে দেড় ঘন্টাকাল পাঠ প্রস্তুতি করানো হয়।
শ্রেণি কর্মসূচি :
প্রতি শনিবার সমাবেশ : ৯:০০-৯:২৫
পিরিয়ড |
হতে |
পর্যন্ত |
সময়কাল |
১ম ঘন্টা |
০৯:২৫ |
১০:০৫ |
৪০ মি. |
২য় ঘন্টা |
১০:০৫ |
১০:৪৫ |
৪০ মি. |
৩য় ঘন্টা |
১০:৪৫ |
১১:২৫ |
৪০ মি. |
বিরতি |
১১:২৫ |
১১:৪০ |
১৫ মি. |
৪র্থ ঘন্টা |
১০:৪৫ |
১১:২৫ |
৪০ মি. |
৫ম ঘন্টা |
১২:২০ |
০১:০০ |
৪০ মি. |
পরীক্ষা পদ্ধতি :
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক বছরে দুটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় যথা : অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক। এছাড়াও প্রতিমাসে মাসিক পরীক্ষা, বোর্ডের পরীক্ষার আগে প্রোগ্রেসিভ টেস্ট, প্রি-টেস্ট, টেস্ট, মডেল টেস্ট ইত্যাদি গ্রহণ করা হয়। প্রতি অভিভাবকদিবসে শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে অভিভাবকগণকে প্রোগ্রেস রিপোর্ট দেখানো হয়।
সহ-শিক্ষা কার্যক্রম :
বিকেএসপির প্রশিক্ষণার্থীদেরকে আধুনিক ও চৌকস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক সহ-শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে যেমন : বিতর্ক, রচনা, উপস্থিত বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। বিশেষ জাতীয় দিবস যথা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস, ১লা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যু দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত হয়। এ ছাড়াও অন্যান্য বিশেষ দিবসে আলোচনা সভা, সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট পর্ব শেষে পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বছর শেষে বর্ষসেরা খেলোয়াড়দেরকে পুরস্কার প্রদান ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষাসফর :
দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর সম্যক ধারণা প্রদানের জন্য প্রতিবছর শিক্ষাসফরের আয়োজন থাকে। এ ছাড়াও বিদেশে বিকেএসপির পক্ষ থেকে কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিলে সংশ্লিষ্ট দেশের দর্শনীয় স্থান সমূহ পরিদর্শনের সুযোগ করে দেয়া হয়।
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা :
বিকেএসপির প্রশিক্ষণার্থীদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার সুব্যবস্থা রয়েছে। মুসলমান প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য জামে মসজিদ রয়েছে যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার ইমাম সাহেব ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার উপর বিশেষ আলোচনা করে থাকেন। এ ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে একদিন অধ্যক্ষ যাপিত জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর এ্যাসেম্বলিতে মোটিভেশন প্রদান করে থাকেন। প্রতিমাসে একদিন সকল শিক্ষক প্রশিক্ষণার্থীদের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষ বিশেষ বক্তৃতা প্রদান করে থাকেন।
প্রস্থাগার সুবিধা :
বিকেএসপিতে একটি আধুনিক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছ যেখানে ক্রীড়া বিষয় সহ সাধারণ বিষয়ের উপর গ্রন্থ রয়েছে। প্রতিবছর এখানে সংযোজিত হচ্ছে নিত্য নতুন গ্রন্থ। রয়েছে দেশি বিদেশি জার্নাল, দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্র পত্রিকা। প্রশিক্ষণার্থীগণ বই ইস্যু করতে পারে এবং নিয়মিত বই পড়তে পারে।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম :
বিকেএসপি কলেজ ভবনে রয়েছে একটি আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। এখানে প্রশিক্ষণার্থীগণকে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য রয়েছে বিশেষ দক্ষ শিক্ষক।
বেতন প্রদান পদ্ধতি :
অভিভাবকের আয় অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের বেতন নির্ধারণ করা হয়। প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে অভিভাবকের আয়ের প্রত্যয়ন পত্রের একটি ফরম ভর্তির চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়। এটি পূরণ করে ভর্তির দিন জমা দিতে হয়। প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণার্থীর বেতন নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে যা বছরে ০৪টি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।
আচরণ ও শৃঙ্খলা :
বিকেএসপি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক প্রতিষ্ঠান। ছেলে ও মেয়েদের আলাদা হাউস (ছাত্রাবাস) রয়েছে। প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীকে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন করতে হয়। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা সকলের জন্য মেনে চলা এখানে বাধ্যতামূলক। ভর্তির সময় অভিভাবকের সাথে ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের চুক্তিনামা করতে হয়। চুক্তিনামা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণার্থীকে প্রতিষ্ঠান হতে প্রত্যাহার/বহিস্কার করা হয়। এ ছাড়া ‘বিকেএসপি প্রশিক্ষণার্থী আচরণ ও শৃঙ্খলা নীতিমালা’ মোতাবেক সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণার্থীদের বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রানুযায়ী প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
প্রশিক্ষণার্থী প্রশাসন :
শৃঙ্খলাবোধ ও নেতৃত্বের বিকাশের জন্য বিকেএসপিতে ক্যাডেট কলেজের অনুরূপ প্রিফেক্টিরিয়াল সিস্টেম চালু রয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝ থেকে সুশৃঙ্খল, উদ্যমী, নীতিবান, পরিশ্রমী, সত্যবাদী ও দায়িত্বশীল প্রশিক্ষণার্থীদেরকে কলেজ প্রিফেক্ট, হাউস প্রিফেক্ট, ডাইনিং প্রিফেক্ট, কালচারাল প্রিফেক্ট নির্বাচন করা হয়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণসহ নিয়োগ প্রদান করা হয়। সংশ্লিষ্ট প্রিফেক্টগণ প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষা, সিডিউল অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়াজনকালে শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদেরকে সহযোগিতা ও নেতৃত্ব দেয়।
একজন প্রশিক্ষণার্থীর দৈনন্দিন কার্যক্রম :
কার্যক্রম |
সময়কাল |
মন্তব্য |
সকালের প্রশিক্ষণ |
০৬৩০-০৮০০ |
রবিবার, মঙ্গলবার, বৃহষ্পতিবার |
নিজস্ব সময় |
০৮০০-০৮৫০ |
গোসল ও কলেজ পোশাক পরিধান |
সকালের নাস্তা |
০৮৫০-০৯০৫ |
নিজ নিজ ডাইনিং |
সাপ্তাহিক সমাবেশ (কলেজ ভবন) |
০৯০০-০৯২৫ |
শনিবার |
ক্লাস টাইম |
০৯২৫-১৩০০ |
শনিবার থেকে বৃহষ্পতিবার |
ক্লাস টাইম |
০৮৩০-১৩০০ |
সোমবার, বুধবার |
মধ্যাহ্ন ভোজ |
১৩২৫-১৩৫৫ |
নিজ নিজ ডাইনিং হল |
বিকালের প্রশিক্ষণ |
১৬০০-১৮০০ |
নিজ নিজ মাঠ |
নিজস্ব সময় |
১৮০০-১৯০০ |
পরিচ্ছন্নতা ও গোসল |
সান্ধ্যকালীন পাঠ প্রস্তুতি |
১৯০০-২০৩০ |
নিজ ক্লাস, কলেজ ভবন |
ডিনার/নৈশভোজ |
২১১৫-২১৪৫ |
নিজ নিজ ডাইনিং হল |
নিজস্ব সময় (পাঠ প্রস্তুতি/পত্রপত্রিকা পড়া/টিভি দেখা) |
২১৪৫-২২৩০ |
নিজ কক্ষ, টিভি রুম |
বাতিবন্ধ |
২২৩০ |
নিদ্রা গমন |
উপসংহার :
বিকেএসপি সুনাগরিক, শিক্ষিত চৌকস ও বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ তৈরী করতে বদ্ধ পরিকর। দেশ ও জাতির গর্বের প্রতীক হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিটি খেলোয়াড় প্রতিনিধিত্ব করবে এবং মুখ উজ্জল করবে এটাই আমাদের অঙ্গীকার। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীগণ বিশ্বসেরা হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করেছে। আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।